কমল বাবু তাঁর এক বিঘা জমিতে ১০ জন শ্রমিক নিয়োগ করে ৬০০ কুইন্টাল গম উৎপাদন করেন । এখানে গড়ে শ্রমিকপ্রতি ৬০ কুইন্টাল গম উৎপাদন হয় । শ্রমিক প্রতি এই ৬০ কুইন্টাল গম উৎপাদনকে গড় উৎপাদন বলে । পরের মৌসুমে ১১ জন শ্রমিক নিয়োগ করে ৬৫৫ কুইন্টাল গম উৎপাদন হয় । এখানে গত বছরের তুলনায় উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ৫৫ কুইন্টাল । এই ৬৫৫ – ৬০০ = ৫৫ কুইন্টাল গম উৎপাদনকে প্রান্তিক উৎপাদন বলে । অর্থাৎ অতিরিক্ত একজন (১১তম) শ্রমিক নিয়োগ করায় উৎপাদন বাড়ল ৫৫ কুইন্টাল । ১১তম শ্রমিক হলো প্রান্তিক শ্রমিক । সুতরাং প্রান্তিক শ্রমিকের উৎপাদন হলো ৫৫ কুইন্টাল । তাহলে এখানে ৬০০ কুইন্টাল হচ্ছে ১০ জন শ্রমিকদের মোট উৎপাদন, ৬০ কুইন্টাল হচ্ছে শ্রমিক প্ৰতি গড় উৎপাদন এবং ৫৫ কুইন্টাল হচ্ছে ১১তম শ্রমিকের প্রান্তিক উৎপাদন। মোট, গড় এবং প্রান্তিক উৎপাদনকে চিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন করা হলো ।
চিত্রে TP (Total Production) রেখা দ্বারা মোট উৎপাদন বোঝানো হয়েছে । মাত্র একটি উপকরণ ON পরিমাণ নিয়োগ করে E বিন্দুতে সর্বোচ্চ NE পরিমাণ মোট উৎপাদন হয় । এখানে ধরে নেওয়া হয়েছে যে উৎপাদনের অন্য উপকরণগুলো স্থির (Fixed) রয়েছে।
গড় উৎপাদন : মোট উৎপাদনের পরিমাণকে মোট উপকরণ বা উপাদান (শ্রমিক) দ্বারা ভাগ করলে গড় উৎপাদন পাওয়া যায় । (এখানে আমরা অন্যান্য উপকরণ স্থির রেখে উপকরণ হিসেবে শ্রমকে নিয়েছি। অন্য উপকরণ নিয়েও গড় উৎপাদন বের করা যায়)।
গড় উৎপাদন :
মোট উৎপাদন
মোট শ্রম উপকরণ
প্রান্তিক উৎপাদন : এক একক উৎপাদনের উপকরণ পরিবর্তনের (অর্থাৎ শ্রম বা মূলধন) ফলে উৎপাদনের যে পরিবর্তন হয়, তাকে প্রান্তিক উৎপাদন বলে । শ্রম ব্যবহার করলে শ্রমের বা মূলধন ব্যবহার করলে মূলধনের প্রান্তিক উৎপাদন বলব। অর্থাৎ এক একক মূলধন বা এক একক শ্রম বা একজন শ্রমিক বৃদ্ধির ফলে মোট উৎপাদনের যে পরিবর্তন হয়, তাকে প্রান্তিক উৎপাদন বলে । ৫১ নং পৃষ্ঠার সূচি থেকে দেখা যায় শ্রম উপকরণ ১ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২ হলে মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ১০ থেকে ২২ কুইন্টাল হয়। এখানে প্রান্তিক উৎপাদন হচ্ছে (২২-১০) = ১২ কুইন্টাল । একইভাবে উপকরণ নিয়োগ ৩ তে বৃদ্ধি করলে মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ৩০ কুইন্টাল । এখানে প্রান্তিক উৎপাদন হলো (৩০-২২) = ৮ কুইন্টাল ।
গড় ও প্রান্তিক উৎপাদনের মধ্যে সম্পর্ক : উৎপাদন-ব্যবস্থায় গড় উৎপাদন ও প্রান্তিক উৎপাদনের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে । ৫০নং পৃষ্ঠার চিত্রে AP হচ্ছে গড় উৎপাদন রেখা এবং MP হচ্ছে প্রান্তিক উৎপাদন রেখা। চিত্রে দেখা যাচ্ছে –
১. প্রান্তিক উৎপাদন বাড়তে থাকলে গড় উৎপাদনও বাড়তে থাকে । অর্থাৎ প্রান্তিক উৎপাদন যখন গড় উৎপাদনের চেয়ে বেশি থাকে, তখন গড় উৎপাদন বাড়ে । এ জন্য প্রান্তিক উৎপাদন রেখা গড় উৎপাদনের উপরে থাকে । চিত্রে ON, উপকরণ নিয়োগ স্তরে প্রান্তিক উৎপাদন, গড় উৎপাদনের চেয়ে বেশি ।
২. প্রান্তিক উৎপাদন যখন গড় উৎপাদনের উপরে থাকে এবং কমতে থাকে, তখন গড় উৎপাদন কম হারে বাড়ে। এ অবস্থায় কিছুদূর পর্যন্ত গড় উৎপাদন রেখা প্রান্তিক উৎপাদন রেখার নিচে থাকে এবং বাড়তে থাকে। চিত্রে ON 2 উপকরণ নিয়োগ স্তরে গড় উৎপাদন, প্রান্তিক উৎপাদনের চেয়ে বেশি হলেও তা কমছে। ON পর্যায়ে এসে আমরা দেখছি যে প্রান্তিক উৎপাদন ও গড় উৎপাদন পরস্পর সমান হয়েছে। এরপর থেকে গড় উৎপাদন ও প্রান্তিক উৎপাদন উভয়ই হ্রাস পেতে থাকে এবং প্রান্তিক উৎপাদন গড় উৎপাদনের চেয়ে কম থাকে ।
মোট উৎপাদন : বিভিন্ন উপকরণ নিয়োগের দ্বারা যে উৎপাদন পাওয়া যায়,তাকে মোট উৎপাদন বলে ।
৩. গড় উৎপাদন যখন সবচেয়ে বেশি হয়, প্রান্তিক উৎপাদন রেখা তখন গড় উৎপাদন রেখার সর্বোচ্চ বিন্দুকে ছেদ করে । অর্থাৎ গড় উৎপাদনের সর্বোচ্চ বিন্দুতে গড় উৎপাদন ও প্রান্তিক উৎপাদন সমান হয় । চিত্রে ON উপকরণ নিয়োগ স্তরে E বিন্দুতে গড় ও প্রান্তিক উৎপাদন সমান ।
চিত্রে ভূমি অক্ষে (OX) শ্রম অথবা উপকরণ নিয়োগ এবং লম্ব অক্ষে (OY) শ্রম বা উপকরণের গড় ও প্রান্তিক উৎপাদন দেখানো হয়েছে । ON পরিমাণ উপকরণ নিয়োগের পূর্বে ON, উপকরণ নিয়োগ স্তরে MP, AP উভয়ই বৃদ্ধি পায়, তবে MP বেশি হারে বৃদ্ধি পায় । এ অবস্থাকে উৎপাদনের ক্রমবর্ধমান স্তর বলে । এরপর ON উপকরণ নিয়োগ স্তরে AP সর্বোচ্চ হয় এবং AP ও MP সমান হয়। এই সংক্ষিপ্ত স্তরে প্রান্তিক উৎপাদন গড় উৎপাদনের চেয়ে বেশি কিন্তু ক্রমহ্রাসমান অন্যদিকে এই স্তরে গড় উৎপাদন ক্রমবর্ধমান এবং সর্বোচ্চ মাত্রার দিকে ধাবিত হয়। আবার ON উপকরণ নিয়োগের পর যেমন ON2 উপকরণ নিয়োগ স্তরে AP, MP উভয় কমতে থাকে, তবে AP-এর চেয়ে MP বেশি হারে কমে । অতএব গড় উৎপাদন ও প্রান্তিক উৎপাদনের মধ্যে তিন ধরনের সম্পর্ক হচ্ছে প্রান্তিক উৎপাদন প্রথম পর্যায়ে গড় উৎপাদনের চেয়ে বেশি (ON পর্যন্ত), তারপর প্রান্তিক উৎপাদন ON উপকরণ নিয়োগ স্তরে এসে গড় উৎপাদনের সমান হয় এবং পরবর্তী সময়ে প্রান্তিক উৎপাদন গড় উৎপাদনের চেয়ে কম হয় (NN2 পর্যন্ত)।
আরও দেখুন...